বীর পুরুষ কবিতা - Bir Purush Poem

বীর পুরুষ কবিতা


বীর পুরুষ কবিতা

   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মনে কর, যেন বিদেশ ঘুরে 

মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দুরে। 

তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ'ড়ে 

দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক'রে,

আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার 'পরে 

টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।

রাস্তা থেকে ঘোড়ার ক্ষুরে ক্ষুরে 

রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।।

সন্ধ্যে হল সূর্য নামে পাটে, 

এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।

ধূ ধূ  করে যে দিক পানে চাই, 

কোনোখানে জনমানব নাই,

তুমি যেন আপন-মনে তাই

ভয় পেয়েছ -- ভাবছো 'এলেম কোথা'।

আমি বলছি, 'ভয় কোরো না মাগো, 

ওই দেখা যাই মরা নদীর সোঁতা।'  

চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে, 

মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে।

গরু বাছুর নেইকো কোনোখানে

সন্ধ্যে হতে গেছে গাঁয়ের পানে,

আমরা কোথা যাচ্ছি কে তা জানে-- 

অন্ধকারে দেখা যায়না ভালো।

তুমি যেন বললে আমায় ডেকে, 

'দিঘির ধারে ওই যে কীসের আলো?'

এমন সময় 'হাঁরে রে রে রে রে'

ওই-যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে।

তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে 

ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে---

বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে 

পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।

আমি যেন তোমায়ে বলছি ডেকে,

'আমি আছি,ভয় কেন, মা, করো!

হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল--

কানে তাদের গোজা জবার ফুল।

আমি বলি, 'দাঁড়া খবরদার,

এক পা কাছে আসিস যদি আর

এই চেয়ে দেখ্ আমার তলোয়ার,

টুকরো করে দেব তোদের সেরে।'

শুনে তারা লম্ফ দিয়ে উঠে 

চেঁচিয়ে উঠল 'হাঁরে রে রে রে রে'।। 

তুমি বললে 'যাস নে খোকা ওরে!'

আমি বলি, 'দেখো-না চুপ করে।'

ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,

ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে,

কী  ভয়ানক লড়াই হলো মা যে 

শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।

কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,

কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।

এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক'রে 

ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।

আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে 

বলছি এসে, 'লড়াই গেছে থেমে।'

তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে 

চুমু খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে।

বলছ, 'ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল,

কী  দুর্দশাই হত তা না হলে!

রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা-

এমন কেন সত্যি হয় না আহা?

ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,

শুনত যারা অবাক হত সবে-

দাদা বলত , 'কেমন করে হবে,

খোকার গায়ে এত কি জোর আছে!'

পাড়ার লোকে সবাই বলত শুনে,

'ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।


বীরপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতার মতো একটি। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা গুলোর মধ্যে বীরপুরুষ কবিতাটি অন্যতম।  কবি এই কবিতার মধ্যে এটি বুঝাতে চেয়েছেন যে একজন মানুষ যখন বিপদে সম্মুখীন হয় তখন সে ইচ্ছা করলে সবকিছু সমাধান করতে পারে কেবল সাহস আর ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে। 

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী এই কবিতাটি যুগ যুগ ধরে সাহিত্যপ্রেমীদের যেমনি আনন্দ যুগিয়েছে তেমনি শিক্ষা দিয়েছে মানুষকে,  বিশ্বকবির প্রতিটি কবিতায় ছিল মানুষকে নিয়ে মানুষকে শিখার জন্য তো বীরপুরুষ কবিতাটি কবির তেমনি একটি কবিতা। 

 বীরপুরুষ কবিতাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মন্তব্য তুলে ধরতে পারেন অথবা কবিতাটি সম্পর্কে আপনার বিশ্লেষণ ও কমেন্ট এর মাধ্যমে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে পারেন।

 

আরো  খবর পরুনঃ   স্বাধীনতা তুমি কবিতা ? শামসুর রাহমান---সংকলিত

আরো  খবর পরুনঃ   চুল নিয়ে কবিতা ? চুল নিয়ে বাংলা কবিতা

আরো  খবর পরুনঃ   কাজী নজরুল ইসলাম এর প্রেমের কবিতা

1 মন্তব্যসমূহ

  1. নামঃআতিক হাসান কাজল

    ঠিকানাঃপার্বতীপুর,দিনাজপুর।

    যোগাযোগঃঃ০১৭৪২৯৯০৫৬৪

    শ্রেনীঃএইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষ।

    কলেজঃকারমাইকেল কলেজ,রংপুর।

    ই-মেইলঃkazolhasan85@gmail.com



    গল্পের নামঃবটগাছ।

    নিরুদের বাড়ির পিছনে একটা বটগাছ আছে।খোকসা গাছের পাশ দিয়ে বেয়ে ওঠা,পুরাতন জংলা মন্দিরের পাশে যেন এক ভুতুড়ে বৃক্ষদেবতা।
    এ গাছের ছাল-ডাল-ফল-শেকড় কোন কাজেরই না।এ গাছেই মুনিয়ার মা গত বছর গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করেছে।গাছটির বৃহদাকার এক ডাল জংলা মন্দিরের উত্তর পাশটা ভেঙ্গে দিয়েছে।প্রত্যেক জননী তার সন্তানকে এ গাছের নিচে যেতে নিষেধ করে।এ গাছের নিচে মুনিয়ার মায়ের আত্না ঘুরে বেড়ায়।বাপ-দাদা,পিতামহসহ আরও চৌদ্দযুগ এ কুসংস্কারগুলো মেনে আসছে।
    মা বলেছিল,উপকারী জীব বেশিদিন বাঁচে না।অথচ বাবা মারা যাওয়ার দু-বছর হলো,বটগাছটা এখনও জীবিত।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন