আসসালামু আলাইকুম |
আসসালামু আলাইকুম একটি আরবী শব্দ এর অর্থ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি আরাম আনন্দ তৃপ্তি ইত্যাদি সালাম একটি সম্মানজনক অর্থমূলক অভিনন্দন জ্ঞাপন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামী একটি অভিবাদন। আস-সালাম এটি মহান আল্লাহ তায়ালার সুন্দর নাম সমূহের মধ্যে একটি এবং জান্নাতের নামসমূহ একটি নাম সালাম আমাদের জীবনে অনেক শান্তি ও সুখ বয়ে আনে।
কিন্ত অনেকসময় দেখা যায় আমরা সালাম সঠিকভাবে দিতে জানিনা সালাম সঠিকভাবে উচ্চারণ করে না সঠিকভাবে আসসালামু আলাইকুম এই শব্দটি উচ্চারণ না করে অন্য ভাবে সালাম প্রদান করে থাকে। অনেকের মধ্যেই এটি নিয়ে একটি জটিলতার সৃষ্টি হয় যে আসলে সালাম সঠিক উচ্চারণ কি এবং সালাম কিভাবে দিতে হবে।
প্রশ্নঃ আমাদের দেশে আমরা সালাম দেয়ার সময় আসসালামু আলাইকুম বলে সম্মোধন করে থাকে কিন্তু পবিত্র কুরআনের কয়েকটি সূরায় এসেছে সালামু আলাইকুম আমরা কোনটা করবো।
উত্তর : ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ’ বলবেন। ‘আসসালামু আলাইকুম’ হচ্ছে আমাদের তাহইয়া। কোরআনে কারিমের মধ্যে ‘সালামু আলাইকুম’ খবর হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
সালামের উৎপত্তি
সালামের প্রথম উৎপত্তি সম্পর্কে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে আল্লাহ তাআলার সর্বপ্রথমে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সালামের শিক্ষা দেন। হাদিসে আছে হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আল্লাহ তায়ালা আদম আলাই সাল্লাম কে সৃষ্টি করে বলেন ফেরেসতাদেরকে সালাম দাও তারা সালামের কি উত্তর দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোনো। এটি হবে তোমার আর তোমার সন্তানদের সালাম।
আদম গিয়ে বলেন, আস্সালামু আলাইকুম(অৰ্থ- ‘আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক’)। ফেরেশতারা উত্তর দেন,ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি (অৰ্থঃ ‘আপনাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহ রহমত বর্ষিত হোক’)।
সালাম দেওয়া কি
অনেকের মধ্যে একটি কনফিউশন কাজ করে সালাম দেওয়া কি ওয়াজিব। উত্তরটি হবে না সালাম দেয়া ওয়াজিব নয় তবে সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব সালাম দেয়া সুন্নত। অর্থাৎ প্রথম যে ব্যক্তি সালাম প্রদান করবে সে একটি সুন্নত পালন করল কিন্তু যাকে সালাম প্রদান করল তার জন্য সালামের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক অর্থাৎ সালামের উত্তর প্রদান করা ওয়াজিব। আশাকরি সালাম দেয়া কি সুন্নত সালাম দেয়া ওয়াজিব কিংবা সালামের উত্তর দেয়া কি এর সঠিক উত্তর আপনি জেনে গেছেন।
আরো খবর পরুনঃ গুগল ম্যাপে দেখা গেল বান্দরবানের পাহাড়ে আল্লাহ্ লেখা
সালাম দেওয়ার নিয়ম
সালাম দেওয়ার পদ্ধতি হল দাঁড়ানো ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করবে কোন গৃহে প্রবেশের পূর্বে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান করবে বয়স্ক লোককে কম বয়সী লোকজন সালাম প্রদান, করবে সন্তান বাবা মাকে সালাম প্রদান করবে, ছাত্র-শিক্ষকের সালাম প্রদান করবে, দূর থেকে আসা কোন ব্যক্তি ব্যক্তি কে সালাম প্রদান করবে, ছোটরা বড়দের সালাম দেবে, কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে এবং আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। ইসলামের নিয়ম হচ্ছে কোন ব্যক্তির সাথে দেখা হওয়া মাত্রই তাকে সালাম প্রদান করে তারপরে কৌশলাদি জিজ্ঞাসা করবে। সালাম দেয়া যেহেতু সুন্নত তাই সকলের উচিত প্রথমে সালাম দেয়ার অভ্যাস তৈরি করা ।
তবে বয়সী ব্যক্তিদের কে যেমন কম বয়সী ব্যক্তিরা সম্মান হিসেবে সালাম প্রদান করে। তেমনি বেশি বয়সী লোকেরা কম বয়সী লোকদেরকে শিক্ষা হিসাবে সালাম প্রদান করে থাকে। আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন আসলে সালাম দেয়ার সঠিক নিয়ম কোনটি সালাম দিতে হলে যে লোকটি দাঁড়ানো অবস্থায় বসা অবস্থায় রয়েছেন তাকে সালাম প্রদান করতে হবে যে লোকটি দূর হতে এসেছেন তাকে।
সালাম দেওয়ার ফজিলত
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “হে বৎস! তুমি যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও। তা তোমার জন্য ও তোমার পরিবার পরিজনের জন্য বরকত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে”।
আরো খবর পরুনঃ কোরআনের যে ১০টি সূরা আপনাকে ১০টি বিপদ থেকে রক্ষা করবে
মেশকাতে বর্নিত আছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারও জওয়াব দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে। সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দু’জন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সঠিক ভাবে সালাম দেয়ার তৌফিক দান করুক আমরা একে অন্যকে সালাম প্রদানের মাধ্যমে অন্যের মঙ্গল কামনা করব এবং নিজের মঙ্গল বয়ে আনবো। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের মঙ্গল করুক আমরা সকলের সকলের জন্য দোয়া করবো।
আরো খবর
পরুনঃ স্বামী-স্ত্রী
দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলেই কি তালাক হয়ে যায়?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন