একটি তারা-সিমকী রোজারিও
নদীর সাথে কথা বলা, রোদের সাথে খেলা করা মেঠো গায়ের সারি সারি গাছপালার আড়ালে হেসে খেলে বেড়ানো মেয়েটির নাম মেঘ বালিকা। কখনো গাছের উপরে কখনো পুকুরের পানিতে তার ছিলো অবাধ বিচরণ। চারদিকে ঝোপঝাড়, নিরবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে ও সে চিৎকার করে হাসতো,কথা বলতো আপন মনে। কারো কোনো অসুখ হলে ছুটে যেতো ডাক্তার ডাকতে কিংবা নিজেই ডাক্তার হয়ে সুস্থ্য করে তুলতো।কারো কিছু হারিয়ে গেলে নিজেই খুঁজে দিতো।
কালবৈশাখী এক ঝড়ের রাতে বালিকা ভিষণ ভয় পেয়েছিলো।নিজের জন্য নয়, হতভাগা পরশীদের সব হারানোর ভয়ে। ভয়ের মাঝে শুরু হয় তীব্র বৈরী বাতাস আর বৃষ্টির ঝাপটা। নিজের ঘরের টিনের ছাউনি যখন একপাশ উড়ছে তখন মেয়েটি ছোট্ট হাতদুটো জড়ো করে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। ঠিক তখনই মেয়েটির বাবা শক্ত হাতে ঘরের চালাখানা ধরে থাকে আর তখনই ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে বাতাস। হঠাৎ দরজায় শব্দ করে বিলের মাঝে থাকা ঘরভাঙা ছেলে মেয়ে গুলো ডাকতে থাকে। মেয়ে টি দরজা খুলতেই হাউমাউ করে তারা কান্নাকাটি করতে থাকে। তাদের পরনের ভেজা কাপড় আর কান্না দেখে মেয়েটি ছুটে গিয়ে নিজের সব জামাকাপড় এনে দেয়। রাতের খাবার দেওয়া থেকে ঘুমানো সবরকম সাহায্য করে। ঝড়ের রাতের পর মেয়েটি শিখেছিলো,জীবন মানেই ঝড়।জীবনে যতোবার ঝড় আসবে নিজের বিশ্বাসের শক্তি ততোবারই তাকে একজন শক্তিশালী পিতার মতোন রক্ষা করবে। দয়ামায়া আর ভালোবাসা আগলে ধরে মেয়েটি গায়ের পথ পাড়ি দিয়ে শহরের বুকে নতুন করে বাসা বাঁধে। অচেনা অজানা মানুষ গুলো কে আবার নতুন করে ভালোবেসে সহযোগিতার হাতটা দেয় বাড়িয়ে। অযত্নে, অবহেলায় বেড়ে উঠা শিশুদের নিয়ে সময় কাটানো,পরিচ্ছন্ন করে সভ্যতার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠাতে চেষ্টা চালিয়ে যায়। মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবতেই সেই ভাবনা ভেদ করে সমাধানের পথটা খুঁজে পায়। সবার সমস্যা যখন সহজ হয়ে যায় তখন তার মনের শক্তি আরও বেড়ে যায়। মনে এতো দয়া যার তার মনেও দুঃখ আসে। যখন পাশের বাড়ির কাজের মেয়েটি হারিয়ে যায়। অনাথ অবলা ছোটো মেয়েটিকে খুজতে থাকে তার মন।কোথাও দেখা না পেয়ে শুধু প্রার্থনা করে, প্রভু ভালো রেখো তারে।কতো তারা উঠে রোজ, কতো তারা ঝরে যায় তবুও মন আকাশ দেখে আর খুঁজে বেড়ায় নিজের আপনজন।সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় সবাই বদলায় মন।মেয়েটির জীবন বাধা পড়ে সংসারের সূতায়।কাজ পাগল মেয়েটিও একটু অবসর চায়।একটু গা এলিয়ে শুয়ে পড়তে চায় নিরব বিছানায়। সংসারের মানুষ গুলো শুধু ছুটে চলার গল্প শোনায়। জীবন যখন ক্লান্ত অনেক সেই জীবনে আসে নতুন মুখ। সেই মুখের মায়ায় সব অবসাদ ভুলে নতুন করে স্বপ্ন সাজায় মন। মন বলে,ওরে মন কিসের এতো সব হারানোর ভয় করিস এইতো তোর বিশ্বাসের তারা জ্বলে উঠেছে। আবার যখন সামনে যাবি এই একটি তারা দেখে পথ খুঁজে পাবি।মেয়েটি আবার উঠে দাঁড়ায়, পা বাড়ায় আলোর পথে।সেই পথ ধরে এগিয়ে চলে, নিজের যোগ্যতা নিয়ে বাঁচতে। আবার নতুন ঘর, নতুন মানুষ, নতুন করে কাজ করতে গিয়ে আপন মানুষ গুলো কে বড় বেশি অচেনা মনে হয়।একটা কাজের জন্য প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতো কাজ জানা মেয়েটাকেও আবার নতুন করে কাজ শিখতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয়।বহুবার চেষ্টা করে, বহু পরীক্ষার পর একটা কাজ ঠিক হয়ে যায়। কাজ করার কৌশল আর দক্ষতার মাঝে মেয়েটির যোগ্যতা বেড়ে যায়।ছুটে চলা নদীর মতো আবার সে ঢেউয়ের উপর দিয়ে হেটে যেতে যেতে পুরনো মানুষ গুলো কে খুঁজে পায় যারা তাকে নতুন করে চিনে,নতুন করে জানে। Gazivai.com এ ১০০ টাকা থেকে ছেলেদের এবং মেয়েদের ঘড়ি কিনতে ক্লিক করুন - এখনই কিনুন
মেয়েটি আগের মতোই সবার সাহায্যে এগিয়ে যায়। ঘৃণা করে নয়,সাহায্য করেই মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা যায় সারাজীবন। যারা তাকে অবহেলা করে সেতো তাকেই সাহায্যের হাত বাড়াতে চায়। প্রখর উত্তাপে চারদিক তৃষ্ণার্ত হয়ে যেমন আকাশের পানে চেয়ে থাকে একটু বৃষ্টির আশায় তেমনি অসুস্থ্য মানুষের মাঝে বালিকা ও আশার আলো হয়ে পথ দেখাতে চায়। পথে যেতে যেতে হঠাৎ করে পা থেমে যায়। দূর থেকে মনে হয় কেউ ডাকে,ওরে ফিরে আয় ফিরে আয়।এইখানে তোর সব আছে। নদীর ঘাটে মাঝী বসে নায়রীর অপেক্ষায়। তোর গাঁয়ে কত ধান ছড়িয়ে আছে কতো লোকে পা মারিয়ে যায়।বাবুই পাখির ছানাগুলো হাওয়ার সাথে দোল খেয়ে তোরে খুঁজে বেড়ায়। তুই যে নেই এইখানে যেখানে নদী বয়ে যায়। বয়স তোর পড়ে গেছে গায়ের বুকে আবার ফিরে আয়।বালিকা আকাশ পানে মুখ তুলতেই একটি তারা হাসে।তুমি যে,বৌ হয়েছো, মা হয়েছো কবে।কদিন পরে নানী হবে সেই খেয়াল কি আছে। তারার মতো বালিকা ও বুঝায় নিজেকে,ফিরে যাবার সময় হয়ে গেছে নিজের পানকৌড়ির মাঝে। ভাবতে ভাবতে নদীর ঘাটে খেয়া মাঝী আসে। খেয়া মাঝীর খেয়াল নেই মেঘ বালিকার কথা। মেঘ বালিকা যখন বলে, মাথার উপর গামছা দিও যেনো রোদ না পড়ে। তখনই মাঝি হকচকিয়ে বালিকার পানে ছুটে। চোখে জল নিয়ে কুর্নিশ করে বলে, আপনারে খুব প্রয়োজন আমাদের গায়ে। কতো মানুষ রোগে ভোগে, কতো মানুষ অসময়ে যায় চলে কেউ কেউরে চিনেনা।বালিকার মন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে কাঁদে। ছোটো কুটিরে ছোটো ছোটো শিশুদের নিয়ে তার আনন্দ ময় জীবন যায় কেটে। প্রতিদিন গায়ের মানুষ সমস্যায় পড়ে তার কাছে ছুটে আসে। সেও ফিরিয়ে দেয় না।সর্বাত্মক সাহায্যের হাত দেয় বাড়িয়ে। দিন যায়,মাস যায়,বছর যায় পেরিয়ে। সব পাখিদের ঘুম ভাঙ্গে, সব মানুষ কাজে ছুটে শুধু বালিকা বিছানায় পড়ে থাকে,অবশেষে চলে যায় ঘুমের পালকি চড়ে। আজও ভোর হয়,পাখিরা ডাকে।শিশুরা খুঁজে বেড়ায় আপন মানুষটাকে।অসহায় মানুষ গুলো আকাশের পানে চেয়ে ভাবে, বালিকা আছে একটি তারা হয়ে।
জন্ম হলে মরতে হবে জেনেও মানুষ কাড়াকাড়ি, মারামারি করে। নিজের বড়াই,নিজের লড়াই চালিয়ে দুঃখ ডেকে আনে।পরের উপকারে আছে সুখ, আছে শান্তি, আছে বেঁচে থাকার আনন্দ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন