ঐতিহাসিক ঘটনাবলি - ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের

 
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের


ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের


ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম ঘাটি ছিল বালিয়াকান্দি। এ উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষকরা নীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে বালিয়াকান্দিতে স্থানীয় রাজাকার ও পুলিশবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে রাজাকার ও পুলিশবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করেবালিয়াকান্দি বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল।তখন দেশে মেজর জিয়ার শাসনামল ছিল।এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় শিহাবের। শিহাবের বাবার গ্রামে একটি ছোট্ট মুদির দোকান আছে। মুদির দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই শিহাবের  পরিবার খুব ভালোভাবেই চলত কারণ শিহাবের আর কোন ভাই বোন ছিল না।দাদা-দাদী  শিহাবের জন্মের আগেই মারা গেছে। পরিবারের একমাত্র সন্তান শিহাব  খুবই আদরের।


 শিহাবকে নিয়ে তার বাবা-মা অনেক স্বপ্ন।শিহাবের যখন  ছয় বছর তখন তাকে গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। কয়েকদিন না যেতেই শিহাবের অনেক গুলো বন্ধু হয়ে যায়।শিহাবের  একটি গুণ ছিল সে অল্প সময়ে মানুষের সাথে মিশতে পারে। শিহাবের  অনেকগুলো বন্ধ থাকলেও যে বন্ধুটির সাথে শিহাবের  সবচেয়ে বেশি সময় কাটত তার নাম হলো আশরাফুল। আশরাফুলের বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আশরাফুল  মা গৃহিণী  থাকলেও তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। 


কিন্তু শিহাবের বাবা মা তেমন পাড়াশোনা করেন নি সহজে বলতে গেলে শুধু নিজের  নামটা লিখতে পারেন।ছোটবেলা থেকেই শিহাব ও আশরাফুল উভয়ই অনেক মেধাবী ছিল। তবে ধারণা করা যায় শিহাব  একটু বেশি মেধাবী ছিল কারণ  শিহাব  পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও গানে অনেক  বেশি পারদর্শী ছিল। তাই শিক্ষকরা শিহাব কে একটু বেশি পছন্দ করতো  কিন্তু আশরাফুলের পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না।শিহাব ও আশরাফুল  দু'জনই মেধাবী থাকায় তাদের মধ্যে আরও বেশি বন্ধুত্ব বেড়ে যায় যেন দুজনেই একে অপরের পরিপূরক। 


তাদের বন্ধুত্বের এত মিল ছিল যে তা দেখে  আশেপাশে অন্য বন্ধুদের অনেক হিংসা হতো আর হিংসা হবেই  না কেন প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আশরাফুল ও শিহাবের ক্লাস রোল ১ ও ২ মধ্যেই ছিল।তাদের আগে কেউ যেতে পারেনি এটা হয়তো একটা হিংসা কারণ হতে পারে। তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করার অনেক উপায় বের করলেও কেউ সফল হতে পারে নি। পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্থা একবার শ্রেণি  শিক্ষক ক্লাসের সবার জীবনের লক্ষ্য জানতে চাইলেন তখন শিহাবের জীবনের লক্ষ্য ছিল ডাক্তার হওয়া আর আশরাফুল জীবনের লক্ষ্য ছিল সরকারি চাকরিজীবি। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি পর গল্পটা অন্য রকম হয়।


আশরাফুলের বাবা-মা চায় আশরাফুল বিভাগীয় বা জেলার কোন নামকরা প্রতিষ্ঠান পড়াশোনা করুক। কারণ গ্রামের সাধারণ স্কুলে পড়ে ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। এমন চিন্তা করাই স্বাভাবিক কারন আশরাফুলের বাবা মা শিক্ষিত ।কিন্তু প্রথমে আশরাফুল কিছুতেই রাজি হয়নি ছোটবেলার বন্ধু তার পরিবার তাঁর জন্মস্থান ছেড়ে শহরের বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। কিন্তু পরিবারের অনুরোধে তাকে ভর্তি হতেই হয়। নিজের  গ্রাম ও তার বন্ধুকে ছাড়তেই হয়। অন্যদিকে  শিহাবের ও ইচ্ছা ছিল যে শহরের নামকরা  প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করবে। কিন্তু শিহাবের  পরিবার রাজি ছিল না। কারণ শহরের নামকরা প্রতিষ্ঠান পড়ার মতো অর্থ বহন করা শিহাবের পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।অবশেষে শিহাব গ্রামের সাধারণ মাধ্যমিক  বিদ্যালয়েই  ভর্তি হয়। 


অন্য দিকে আশরাফুল শহরের একটি ভালো নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। প্রথম কয়েক সপ্তাহ তাদের খারাপ লাগলো পরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিছু দিন না যেতেই আশরাফুলের অনেক বন্ধু হয়ে যায়। আশরাফুলের বন্ধুরা সবাই অনেক মেধাবী। আশরাফুল গ্রামের ইস্কুল থেকে পড়ে আসায় আশরাফুল অনেক কিছু থেকেই পিছিয়ে ছিল। যেমন তার বন্ধুরা অনেকেই সুন্দর করে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে কিন্তু আশরাফুল তা পারে না। আবার আশরাফুল শুদ্ধ করে বাংলাতেই ভালো ভাবে কথা বলতে পারে না। সে অনেক কথা বলার সময় তার আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে  তা নিয়ে তার অনন্য বন্ধুরা তার  সাথে মজা করতো।


 এসব কিছু দিক থেকে আশরাফুল একটু পিছিয়ে ছিল। আসলে গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসলে অনেক ছেলে মেয়েরাই  প্রথমে এমন  সমস্যার সম্মুখীন হয়।কিন্তু আশরাফুল কিছু দিন  পড়েই তাঁর বন্ধুদের মতো কথা বলাসহ  ইংরেজিতেও  কথা বলা শিখে যায়। সহজে বলতে গেলে অল্প কয়েকদিনের না যেতেই আশরাফুলের মধ্যে আচরণের প্রার্থক্য লক্ষ করা যায়। আশরাফুল শহরের মেধাবী বন্ধু পেয়ে সে আরও বেশি পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। আশরাফুল বন্ধদের সাথে অবসর সময়ে group study গান, কবিতা, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সময় কাটান। অন্যদিকে শিহাবেরও বন্ধু হয়। শিহাবের বন্ধুরা রোজই ইস্কুল ফাঁকি দেয়  প্রথমে শিহাব না দিলেও কিছু দিন পর শিহাবও তার বন্ধুদের মতো ইস্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। 


শিহাব প্রথম পড়াশোনায় মনোযোগী থাকলেও কিছু দিন না যেতেই তাঁর অনন্য বন্ধুদের মতো শিহাব পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে পরেন। কিছু দিন না যেতেই এলাকার পাতি রাজনীতিতে যুক্ত হয় শিহাব। শিহাবের এখন অধিকাংশ সময় কাটে এলাকার বড় ভাইদের সাথে।শিহাবের আচরণেরও অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সে অনেকটা খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যায়। তার মা বাবার সাথে সামান্য কথায়  রেগে যায়। কিছুদিন না যেতেই শিহাব  ধূমপানে আসক্ত হয়ে যায়। শিহাব এখন অবসর সময় কাটান বিড়ি সিগারেট ও বিভিন্ন তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করে। শিহাবে মা-বাবা শিহাবের আচরণ দেখে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।


এখন সে বিদ্যালয় ঠিকমতো যায় না, সহজে বলতে গেলে সে পড়াশোনার বাইরে গেছে। বছর দুয়েক পর আশরাফুল শীতকালীন ছুটিতে  তার গ্রামের বাড়িতে আসেন। আশরাফুল গ্রামের বাড়িতে এসেই শিহাবের  বাড়িতে যান। শিহাবকে  বাড়িতে না পেয়ে আশরাফুল তার মার কাছ থেকে শুনে আশরাফুলের কথা। তার মার কথা শুনে আশরাফুলের মনও খারাপ হয়ে যায়। হঠাৎ দুইদিন পর আশরাফুল ও শিহাবের দূর থেকে চোখে চোখে দেখা হয় কিন্তু কেউ কারো কাছে আসে নি কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।কেন কথা বলে নি তার কারণ আমি এখনো খুঁজে পাই নি।আশরাফুলের বাবা আশরাফুল কে  বেশিদিন গ্রামে থাকতে দেয়নি। 


চারদিন পর আশরাফুল চলে যায় । আশরাফুল  এসএসসি পাশ করার পর ঢাকা কলেজে ভর্তি  হন। ঢাকা কলেজ থেকে পাস করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পিছনে অনেক কাহিনী ছিল সেদিকে যাচ্ছিনা। এইদিকে শিহাব এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি কারণ নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় কোনো পরীক্ষা দেন নি শিহাব দশম শ্রেণীতেও কোনদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারিনি। শিহাবের বাবা নিজে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে সুপারিশ করলেও কাজ হয় নি।


 এভাবেই শিয়াবে শেষ হয়ে যায় পড়াশোনা। শিয়াবের পিতা-মাতা শিয়াবকে নিয়ে সর্বদা চিন্তায় থাকেন। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শিয়াব  অনেক অবৈধ কাজও করে। পাড়ার বয়স্করা লোকজন বলে যে শিয়াব  বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বছরখানেক না যেতেই শিয়াব বিয়ে করে ফেলে। আর বিয়ে টা হয়েছিল শিয়াবের  পরিবারের সম্মতিতেই। 


বিয়ের পর শিয়াবে দিনকাল মোটামুটি ভালই চলছিল। শিয়াব এখন তার বাবার সাথে কৃষি কাজ করেন। এদিকে আশরাফুল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে এমএ পাস করেন। এমএ পাস করে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় দেন আশরাফুলের কোথাও চাকরি হচ্ছে না। আশাফুল প্রথমে মানসিক টেনশনে পড়ে যান। বছর দুয়েক কঠোর পরিশ্রম করার ফলে আশরাফুলের প্রথম চাকরি হয় সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঐদিন একটা আশ্চর্য জিনিস লক্ষ্য করা যায় যেদিন আশরাফুলের প্রথম চাকরি হয় ওই দিনই শিয়াব প্রথম মেয়ের বাবা হন। 


                                           রাকিব খান 

                              অর্থনীতি ডিপার্টমেন্ট 

                          সরকারি তিতুমীর কলেজ 

                 শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২০২২

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন